আহমদ গিয়াস, সীমান্ত থেকে ফিরে :
সীমান্ত পেরিয়ে যেসব রোহিঙ্গা তরুণী বাংলাদেশে আসছে তাদের পছন্দ হলেই তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অজ্ঞাত স্থানে। গত দুই মাসে এই ধরনের অন্তত ১০জন রোহিঙ্গা তরুণীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর ‘নির্যাতন’ চালানো হয়েছে। এরমধ্যে ৭ জনকে পূনরায় ফেরত পাঠানো হলেও ৩ জন তরুণী এখনও নিখোঁজ রয়েছে। বুধবার রাতেও কুতুপালং শিবির সংলগ্ন নতুন রোহিঙ্গা টাল থেকে ৮ বছর বয়সী ঘুমন্ত এক কন্যা শিশুকে অপহরণ করার সময় তার মা দেখে ফেলায় তার চিৎকারে জড়ো হওয়া লোকজনের ধাওয়ায় তা ব্যর্থ হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গতকাল বৃহস্পতিবার মাগরিবের নামাজের পর কুতুপালং মসজিদ থেকে মাইকিং করে সন্তানদের অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরে কুতুপালং এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৩ মাসে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় অবস্থান করছে কুতুপালং শিবিরের দুই পাশের পাহাড়ী জঙ্গলে। শিবিরের পাশে ঘর তুলতে প্রভাবশালী মহলকে টাকা দিতে না পেরে অনেকেই আশ্রয় নিচ্ছে পাশ্ববর্তী পাহাড়ী জঙ্গলে। আর সেখানে কোনমতে পলিথিন ও ঝোঁপ-ঝাড় দিয়ে তৈরী করা ছোট্ট ঘরে গাদাগাদি করে বাস করছে তারা। এদের পাশাপাশি বালুখালী পশ্চিম পাড়া সংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশেও আশ্রয় নিয়েছে প্রায় এক হাজার পরিবারের ৫ হাজার রোহিঙ্গা। নতুন আসা এসব রোহিঙ্গাদের অধিকাংশ পরিবারেই কর্মক্ষম পুরুষ নেই। ফলে এসব পরিবারের সদস্যদের উপার্জনের একমাত্র উপায় ভিক্ষাবৃত্তি। এ কারণে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের উখিয়া সদরের পর থেকে বালুখালী পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রাস্তার দুপাশে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী ও শিশুকে সাহায্যের আশায় বসে থাকতে দেখা যায়। এদের মধ্যে কিশোর-কিশোরী ও তরুণীরাও রয়েছে। কেউ গাড়ী থামিয়ে সাহায্য দিতে চাইলে ভিক্ষা প্রত্যাশীরা সামনে এগিয়ে যায়। এভাবে গত রবিবার সন্ধ্যায় প্রলোভন দেখিয়ে দুই রোহিঙ্গা কিশোরীকে অপহরণ করা হয়। তারা এখনও ফেরেনি। পরদিন সোমবার রাতে কুতপালং রোহিঙ্গা টাল থেকে অপহরণ করা হয় ফাতেমা নামের ৩ সন্তানের এক জননীকে। দুইদিন পর বুধবার দুপুরে তাকে ফেরত পাঠানোর পর স্থানীয় এক ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ৩ সন্তানের জননী খেয়ারিপ্যারাং এর ফাতেমার স্বামী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার মাত্র ৫ দিনের মাথায় স্থানীয় দূর্বৃত্তদের হাতে অপহরণের শিকার হন। তারা প্রায় ২ মাস আগে বাংলাদেশে এসে কুতুপালং রোহিঙ্গা টালে (অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবির) আশ্রয় নেন। এরআগে একইভাবে অপহরণের শিকার হয়েছে অন্তত ৭জন রোহিঙ্গা তরুণী-কিশোরী। যার মধ্য থেকে ৬জন ফিরে এলেও একজন কিশোরী এখনও নিখোঁজ রয়েছে। কিন্তু অভিভাবকহীন এসব রোহিঙ্গা কিশোরী-তরুণীর খোঁজ নেয়ার এখন কেউই নেই।
জালাল নামের এক রোহিঙ্গা যুবক ঘটনার কথা স্বীকার করে জানান, প্রভাবশালীদের মদদপুষ্ঠ স্থানীয় কিছু দূর্বৃত্ত কোন রোহিঙ্গা কিশোরী বা তরুণীকে ‘পছন্দ’ হলেই এমন ঘটনা ঘটাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার কারো সাহস নেই।
তিনি আরো জানান, এখান থেকে কিশোরী-তরুণীদের অপহরণের পর পতিতালয়ে বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। অসহায়ত্বের কারণে এসব ঘটনার কোন প্রতিকার পাচ্ছে না ভূক্তভোগীরা।
রোহিঙ্গা তরুণীদের অপহরণের কথা শুনেছেন বলে জানান শিবিরের মেডিক্যাল অফিসার ডা. জাকির। তিনি জানান- এনিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার মাগরিবের নামাজের পর কুতুপালং মসজিদ থেকে মাইকিং করে সন্তানদের ব্যাপারে অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সুত্র : দৈনিক কক্সবাজার
তোফায়েল আহমেদ:: কক্সবাজারের পর্যটন স্পটগুলোতে জবরদখল ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। জমজমাট পর্যটন ...
পাঠকের মতামত